বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : শেষ পর্যন্ত এডিবির অর্থায়নেই হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না হারবার কাজটি পেতে মরিয়া হলেও সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকই (এডিবি) পেতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে চূড়ান্তভাবে বাদ গেলো চীনা কোম্পানি। ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার ঢাকা-সিলেট চারলেন নির্মাণে উন্নয়ন সহযোগীর সন্ধানে ছিল সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ঢাকা-সিলেট চারলেন নির্মাণের পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এর আগে ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব ঢাকা (কাচপুর)-সিলেট রোড টু ফোরলেন হাইওয়ে অ্যান্ড কন্সট্রাকশন অব সার্ভিস লেন অন বোথ সাইড’ প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রকল্পটির পিডিপিপি অনুমোদন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির অনুকূলে বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল ইআরডিকে।
স্বল্পসময়েই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সহযোগী খুঁজে পেয়েছে ইআরডি। ইআরডি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ জানিয়েছেন, প্রকল্পে যত ব্যয় হবে সবই অর্থায়ন করবে এডিবি। প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি, মূল প্রকল্প প্রণয়ন ও ঋণ নেগোসিয়েশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে সংস্থাটি।
ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর ঢাকা-সিলেট চারলেনে ফান্ডিং করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের সমস্ত ঋণ এডিবি একাই ফান্ডিং করবে। ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে এডিবি। এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ।
এর আগে প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য সড়ক ও মহাসড়ক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ সাধে চীনের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি চায়না হারবার। এ প্রকল্পে চীন সরকারের অর্থায়ন করার কথা। কিন্তু ঘুষ সাধার অপরাধে কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করেছে সরকার। এমনকী দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা করে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রস্তুত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
চীনের অর্থায়নে ২২৬ কিলোমিটার সড়কের কথা উল্লেখ থাকলেও নতুন করে তা কমে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। এডিবি অর্থায়নের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ডিপিপিতে। চীনের অর্থায়নের সব কিছুই ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, মূল সড়কের উভয়পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলিকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিত করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চারলেনটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
প্রকল্পের আওতায় আলাদা সার্ভিস লেনসহ সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ৯৮৬ দশমিক ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে কাচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ইউটিলিটি স্থানান্তর করা হবে প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের আওতায় ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কালভার্টগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১ হাজার ৩৮১ মিটার। ছোট-বড় ৭০টি ব্রিজসহ থাকবে পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস।
নতুন পরিকল্পনায় চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস, ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দু’টি রেস্ট হাউজ থাকবে সড়টিতে। সিলেট চা উৎপাদনে ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। বর্তমানে এখানে বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। সিলেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ও সার কারখানা। সিলেটের পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রচুর তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে। এসব কারণে এডিবি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে চারলেন।
এর আগে চায়ের প্যাকেটের মধ্যে বিদেশি মুদ্রায় ঘুষ সাধে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে সেই অর্থ ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চায়নার সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রকল্প থেকে তুলে নেওয়া হয়।
এ প্রকল্পে এডিবি ঋণের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-সিলেট চারলেন সরকারের প্রায়োরিটি প্রকল্প। চীনের পরে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলাম। তবে নতুন সুখবর হচ্ছে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে এডিবি। এডিবির ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঢাকা-সিলেট চারলেনে এডিবি ফান্ডিং করবে এটা সবার জন্যই সুসংবাদ।